শ্রেণী একাদশ
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
ডাকাতের মা
প্রশ্ন- ছোটোগল্প হিসেবে ‘ডাকাতের মা’ গল্পের সার্থকতা আলোচনা কর। (৫)
উত্তর- সাহিত্যের একটি বিশেষ প্রকরণ হলো ছোটোগল্প। এবার দেখে নেওয়া যাক, সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ গল্পটিকে ছোটোগল্প বলা যায় কি না।
প্রথমত, ছোটোগল্পে ‘বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা’ থাকবে না। ছোটগল্পে সামগ্রিক জীবনবৃত্তান্ত থাকে না, বরং প্রাত্যহিক জীবনের খন্ডচিত্র তুলে ধরা হয়। আমাদের আলোচ্য ‘ডাকাতের মা’ গল্পটির কাহিনি শুরু হয়েছে রাতে এবং শেষ হয়েছে পরদিন সকালে। এই ক্ষুদ্র পরিসরে লেখক সৌখীর পরিবারের কাহিনি, সৌখী এবং তার মায়ের মনোজগত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয়ত, গল্পের শুরু হয়েছে রাত্রিবেলায় সৌখীর মায়ের চিন্তাভাবনা দিয়ে। রাতেই ছেলে ফিরে এসেছে এবং সৌখীর মা তার ছেলেকে কী খাওয়াবে সেই চিন্তা থেকে পেশকারের বাড়িতে চুরি করার সিদ্ধান্ত এবং অবশেষে চুরির দায়ে সৌখীর জেলে যাওয়া- পুরো ঘটনাটি একমুখী। কাহিনির একমুখীনতা এবং দ্রুত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছোটোগল্পেরই লক্ষণ।
তৃতীয়ত, লেখক এই গল্পে কোনো তত্ত্ব উপস্থাপন করতে চাননি। নীতিশিক্ষামূলক কোনো উপদেশও নেই এতে।
চতুর্থত, ছোটোগল্পে সাধারণত মানবজীবনের কোনো একটি বিশেষ মুহূর্ত, ভাব বা চরিত্রের একটি বিশেষ দিক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আমাদের আলোচ্য গল্পেও দেখি সৌখীর মায়ের মাতৃত্বের দিকটিই প্রধানভাবে ফুটে উঠেছে।
পঞ্চমত, ছোটোগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’। অর্থাৎ, কোথাও যেন একটা অতৃপ্তি রয়েই যায়। এই গল্পেও সৌখীর জেলে যাওয়ার মাধ্যমে কাহিনির পরিসমাপ্তি ঘটে ঠিকই কিন্তু পাঠকমনে একটা গুঞ্জরন চলতেই থাকে। কারণ, সৌখীর তো জেলে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না, তার কাছেই যথেষ্ট টাকা ছিল যা দিয়ে তার মা ‘আলুচচ্চড়ি’ রান্না করতে পারতো।
যাইহোক, উপরোক্ত দিকগুলি আলোচনা করে একথা বলা যায় যে, ‘ডাকাতের মা’ গল্পটি একটি সার্থক ছোটোগল্প।