প্রবন্ধ- চরিত্র গঠনে খেলাধুলার গুরুত্ব || Charitra Gathane Kheladhular Gurutwo
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সহ একাধিক পরীক্ষায় বাংলা প্রবন্ধ রচনা করতে হয়। যদিও প্রবন্ধ রচনা একটি বিশেষ দক্ষতা এবং পরীক্ষায় একজন ছাত্র বা ছাত্রীর লিখন সামর্থ্য যাচাই করার জন্য প্রবন্ধ রচনা করতে দেওয়া হয়।তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলেমেয়েরা প্রবন্ধ মুখস্থ করে পরীক্ষা দিতে যায়। যাইহোক, এই পোস্টে “চরিত্রগঠনে খেলাধুলার গুরুত্ব” শীর্ষক প্রবন্ধটি দেওয়া হল। ছাত্রছাত্রীরা এই প্রবন্ধটি অনুসরণ করে নিজেদের মতো করে লিখতে পারে, সেক্ষেত্রে তাদের লেখাটি মৌলিক হবে।
ভূমিকা– পৃথিবীর সকল জীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জীব হল মানুষ। আর তার এই শ্রেষ্ঠত্বের মূলে যে কেবল বুদ্ধির ভূমিকা রয়েছে এমনটা নয়। মানুষকে অন্যান্য জীবের থেকে আলাদা করেছে কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যেগুলি কেবল মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সহমর্মিতা, ভ্ৰহাতৃত্ববােধ, ঐক্যবদ্ধতা, সততা, উপস্থিত বুদ্ধি, সহনশীলতা, আত্মসম্মানবােধ, জাতীয়তাবােধ, উদারতা, ক্ষমাশীলতা, শালীনতাবোধ ইত্যাদি। এতগুলি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যাইহোক, চরিত্রই হল একজন মানুষের প্রকৃত পরিচয়।
চরিত্রগঠনের নানা দিক– মানুষের চরিত্র সম্পর্কে যে কথাটা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা হল, মানবচরিত্র প্রতিভা-নির্ভর নয়, নিতান্তই অনুশীলন-সাপেক্ষ। এখন প্রশ্ন হল, চরিত্রানুশীলনের ক্ষেত্র কোথায়? অনেকেই চরিত্র গঠনের ব্যাপারে পরিবারের উপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। মানবজীবনের শুরু পারিবারিক গণ্ডীর মধ্যে। কথায় বলে, “Home is the first school”। পরিবারের মধ্যেই শিশুর প্রাথমিক শিক্ষালাভ ঘটে। আবার, চরিত্র গঠনেরও প্রাথমিক ক্ষেত্র হল পরিবার। কিন্তু এই গণ্ডীর মধ্যে চরিত্রগঠনের উপাদানগুলির সন্ধান পাওয়া গেলেও তা সর্বাংশে এবং সর্বার্থে অঙ্গীকৃত করা সম্ভব হয় না। অন্যভাবে বললে, পারিবারিক গণ্ডীর মধ্য থেকে চরিত্রগঠনের তত্ত্বগত দিকগুলি সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট ধারণা লাভ করা যায়, কিন্তু সেগুলি ব্যবহার করার ক্ষেত্রটি খুবই সীমাবদ্ধ।
পরিবারের বাইরে রয়েছে বিশাল বিস্তৃত জগৎ। সেখানে পরিবেশ ও পরিস্থতি ভিন্ন প্রকৃতির। পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিশু মানব চরিত্র সম্পর্কে যে প্রাথমিক ধারণাটুকু লাভ করে, বাড়ির বাইরে সেগুলি প্রয়োগ করার সুযোগ থাকে। তবে চরিত্র অনুশীলনের এই পর্যায়ে আনন্দলাভের বিষয়টিও যুক্ত রয়েছে। একথা অনস্বীকার্য যে, আনন্দ না থাকলে কোনাে কাজই প্রকৃত অর্থে সর্বাঙ্গসুন্দর হয় ন। তাই চরিত্রগঠনের জন্যও আনন্দের উপস্থিতি একান্তই প্রয়ােজন।
এই প্রেক্ষাপটে চরিত্রগঠনের জন্য পরিবারের বাইরে এমন একটি ক্ষেত্রের অনুসন্ধান করতে হবে যেখানে চরিত্র গঠনের তত্ত্বগুলি বাস্তবে ব্যবহৃত হবে এবং একইসঙ্গে তা হবে আনন্দদায়ক। এখানেই খেলাধুলার গুরুত্ব। একথা এখন প্রমাণিত যে, চরিত্রগঠন এবং তার বিকাশ ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করার ব্যাপারে খেলাধুলা খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যেমন-
প্রথমত, খেলাধুলায় আনন্দ পাওয়া ও আনন্দ দেওয়ার সুযােগের অভাব নেই। অতএব খেলাধুলার মাধ্যমে যা কিছু অর্জিত হবে- তা হবে আনন্দের হাত ধরে। এই আনন্দময় পরিবেশ একজন মানুষের সৎ গুণগুলি বিকাশের পক্ষে সহায়ক।
দ্বিতীয়ত, খেলাধুলা একটি সমষ্টিগত বিষয় অর্থাৎ এখানে বহুজনের সমাবেশে কাজ করতে হয়। এর প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে একজন মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা দূর হয়। একইসঙ্গে, বিভিন্ন গুণসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ তৈরি হয়। এরফলে একজন খেলোয়াড় যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তা ভবিষ্যৎ জীবনের সহায়ক হয়।
তৃতীয়ত, খেলাতে হারজিত থাকবেই। জয়লাভের জন্য সহখেলােয়াড়দের সক্রিয় সহযােগিতা প্রয়ােজন- এই সত্য উপলদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে সহমর্মিতার জন্ম হয় এবং কার্যক্ষেত্রে তা প্রয়ােগ করতে হয়। এই সহমর্মিতার সূত্র ধরে অন্তরে প্রবেশ করতে থাকে মমত্ববােধ, ভ্রাতৃত্ব ও উদারতা। বিপরীতভাবে, সহখেলোয়াড়দের মধ্যে সহযোগিতার অভাব থাকলে কোনো খেলাতেই জয়লাভ করা যায় না, এই সত্যটা খেলার মাঠেই উপলব্ধি করা যায়।
চতুর্থত, জীবন পথে সততার মূল্য যে অপরিসীম- একথাও হৃদয়ঙ্গম করাতে খেলাধুলা সাহায্য করে। কারণ, খেলাধুলার ক্ষেত্রে অসত্য, অসদাচরণের কোনাে স্থান নেই। সাময়িকভাবে তার জয়ী হলেও তাদের স্বরূপ অবিলম্বে প্রকাশিত হবেই।
পঞ্চমত, উদ্যমী, সাহসী ও পরমতসহিষ্ণু হওয়ার জন্যও খেলাধূলা আদর্শ মাধ্যম। খেলাধুলার মূল লক্ষ্য যখন আনন্দ পাওয়া এবং আনন্দ দেওয়া, তখন এই বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যতিরেকে তা সম্ভব নয়। বলাবাহুল্য, মানসিক কাঠামােকে সুন্দর করার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলা যে দৈহিক শ্রীবৃদ্ধিও সাধন করে সেকথা তাে সর্বজনবিদিত। অতএব, দৈহিক অবক্ষয় রােধের জন্যও খেলাধুলার প্রচার ও প্রসার ঘটানাে যেকোনাে জাতির প্রাথমিক ও আবশ্যিক কর্তব্য হওয়া উচিত।