দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- ব্রতচারীর উদ্ভাবক কে? সংক্ষেপে ব্রতচারী সম্পর্কে আলোচনা কর। ১+৪
উত্তর- ব্রতচারীর উদ্ভাবক ছিলেন গুরুসদয় দত্ত (১৮২২- ১৯৪১)।
পরাধীন ভারতবর্ষে দেশবাসীকে শরীরচর্চা এবং স্বাদেশিকতায় উদ্বুদ্ধ করাতে ব্রতচারী আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। গুরুসদয় দত্ত ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে এই আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। ১৯৩৫ সালে স্থাপিত হয় বেঙ্গল ব্রতচারী সমিতি। সেইসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্রতচারীর অনেকগুলি শাখা খুলেছিল।
সমকালের প্রেক্ষাপটে ব্রতচারীকে একটি সামাজিক আন্দোলন বলা চলে। তবে সাধারণ অর্থে, যারা কোনো অভীষ্ট সিদ্ধের জন্য একাগ্র চিত্তে কোনো ব্রত পালন করে তাদেরকে ব্রতচারী বলা হয়। জ্ঞান, শ্রম, সত্য, ঐক্য এবং আনন্দ- ব্রতচারীকে এই পঞ্চব্রত পালন করতে হত।
ব্রতচারী প্ৰতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে রয়েছে গুরুসদয় দত্তের বঙ্গ-ঐতিহ্যপ্রীতি। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে শরীর ও মনকে বিকশিত করা এবং বৃহত্তর স্বার্থে মানবসেবায় নিয়োজিত করাই ছিল ব্রতচারী আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য।
ব্রতচারী হল উন্নত জীবনবোধের শিক্ষা। ব্রতচারীর কী কী করণীয় এবং কোনগুলি নিষেধ- এই বিষয়ক ‘বিধিমালা’ তৈরি করেছিলেন গুরুসদয় দত্ত। ব্রত পালনের বিষয়টি যাতে মনোগ্রাহী হয় সেইজন্য অনেক গানও রচনা করেছিলেন তিনি। এই গানগুলিতে শ্রমের প্রতি সম্মান, সত্যনিষ্ঠা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা রয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষের নৈতিক উন্নতিসাধন করাই ছিল এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য।
যাইহোক, ১৯৪১ সালে ব্রতচারীর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাণপুরুষ গুরুসদয় দত্তের প্রয়াণের পর এর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে।