দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
শম্ভু মিত্রের নাটক বিভাব
প্রশ্ন- ‘বিভাব’ কথাটির সাধারণ অর্থ কী? ‘বিভাব’ নাটকটির নামকরণ কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ, আলোচনা করো। ১+৪ (উঃ মাঃ ২০১৮)
উত্তর- শম্ভু মিত্রের একটি অসাধারণ একাঙ্ক নাটক হল ‘বিভাব’। অলংকারশাস্ত্র অনুযায়ী ‘চিত্তে শোকাদি নয় প্রকার স্থায়ীভাব সৃষ্টির কারণকেই বিভাব বলা হয়’। বিভাব হল করুণা, শৃঙ্গার ইত্যাদি রসের উৎপত্তির হেতু।
নাটকের শুরুতেই নাট্যকার জানিয়েছেন যে, জনৈক ভদ্রলোক পুরনো নাট্যশাস্ত্র ঘেঁটে এই নাটকের নামকরণ করেছেন ‘বিভাব’। একইসঙ্গে, অলংকারশাস্ত্র অনুযায়ী এই নাম যথার্থ কিনা তা বিচার করার ভার তিনি সংস্কৃত পণ্ডিতদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। এখন দেখা যাক, অলংকারশাস্ত্রের বিচারে এই নাটকের নামকরণ সার্থক হয়েছে কি না।
শম্ভু মিত্র জানিয়েছেন যে তিনি হাসির নাটক মঞ্চস্থ করতে চান কারণ তার বক্স-অফিস ভালো। দর্শকের যাতে হাসি পায় সেইজন্য পাত্রপাত্রীগণ ভঙ্গি-বহুল অভিনয় করেন। কাল্পনিক চেয়ারে বসে কাল্পনিক চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া- এসব করে দর্শকদের হাসানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এতে তাঁরা সফল হননি। এরপর তারা যথাক্রমে একটি ‘লভসিন’ এবং একটি ‘প্রোগ্রেসিভ লভসিন’ মঞ্চস্থ করেন। এর থেকে বোঝা যায় যে নাট্যকারের আসল উদ্দেশ্য হাস্যরস পরিবেশন করা। সেদিক থেকে বিচার করলে এই নামকরণ সার্থক বলে মনে হয়।
নাটকের শেষ অংশ দেখা যায় শম্ভু মিত্র এবং অমর গাঙ্গুলী জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। সেখানে ‘চাল চাই, কাপড় চাই’- এই স্লোগান দিয়ে একটি মিছিল এগিয়ে আসতে থাকে। আসলে, অন্নবস্ত্রের দাবী একটা রূঢ় বাস্তব। মানুষ বাস্তবতা থেকে মুখ ফিরিয়ে হাসির নাটক দেখে কৃত্রিম আনন্দ উপভোগ করতে চায়। পুলিশের গুলিতে মিছিলের অগ্রভাগে থাকা একটি ছেলে ও মেয়ে চিৎকার করে পড়ে যায়। শোভাযাত্রীদের আর্ত-হাহাকারে ভরে ওঠে আকাশ বাতাস। এইভাবে, হাস্যরস পরিবেশনের উদেশ্য নিয়ে যে নাটকের শুরু, তা শেষাবধি জীবনরসে সিক্ত হয়ে ওঠে এবং নাটকটিকে সার্থকনামা করে তোলে।