ভাত গল্প থেকে বড় প্রশ্ন
প্রশ্নের মান- ৫
প্রশ্ন- “তুমি কি বুঝবে সতীশবাবু?”- সতীশবাবু কে? কোন প্রসঙ্গে কেন এই মন্তব্য করা হয়েছে? ১+৪
উত্তর- মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পে উচ্ছব যার জমিতে কৃষিমজুরের কাজ করে, তিনি হলেন সতীশবাবু। তার পুরো নাম সতীশ মিস্ত্রি।
এক দুর্যোগের রাতে উচ্ছব তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সকলকে হারিয়েছিল। মাতলা নদীর বানে তার ঘরসংসার খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিল। বিপদটা এমনই অপ্রত্যাশিত ছিল যে উচ্ছব একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিল। সে প্রায় পাগলের মতো মরিয়া হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নাম ধরে ধরে ডাকছিল এবং খড়ের চালের নীচ থেকে তাদের সাড়া পাওয়ার আশাতে সেখানেই বসেছিল।
এদিকে বন্যা উপলক্ষে গ্রামে সরকারি উদ্যোগে লঙ্গরখানা খোলা হয়েছিল। কয়েকদিন ধরেই সেখানে খিচুড়ি খাওয়ানো হচ্ছিল। উচ্ছব এতদিন অভুক্তই ছিল। যখন সে লঙ্গরখানায় পৌঁছায় তখন খিচুড়ি শেষ হয়ে গেছে। শুকনো চাল চিবিয়ে জল খেয়ে সে কয়েকটা দিন কাটায়। একদিকে সদ্য স্ত্রী-সন্তান হারানোর শোক আরেকদিকে ক্ষুধার জ্বালা- উচ্ছবের চিন্তাশক্তি যেন লোপ পেতে বসেছিল।
এমন সময় সে কলকাতা যাবার সুযোগ পায়। গ্রামতুতো বোন বাসিনীর মনিব বাড়িতে অঢেল ভাত। সেই ভাতের টানে উচ্ছব কলকাতা যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ভাত খেলেই তো সে আবার নতুন করে ভাবতে পারবে, বউ ছেলেমেয়েদের জন্য কাঁদতে পারবে। অভুক্ত উচ্ছবের যে কাঁদবার শক্তিটুকুও নেই!
উচ্ছবের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সতীশ মিস্ত্রি বলেছিল যে উচ্ছবের মতিচ্ছন্ন হয়েছে, কারণ, স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে লোকে পাগল হয়ে যায় আর উচ্ছব ভাত-ভাত করছে। এই প্রসঙ্গেই উচ্ছব বলেছিল- “তুমি কি বুঝবে সতীশবাবু?”
সতীশবাবু অবস্থাপন্ন মানুষ। তিনি পাকা বাড়িতে বসবাস করেন এবং তার ধানচালও থাকে নিরাপদে। যতই প্রাকৃতিক বিপর্যয় হোক তাকে বাস্তুহারা হতে হবে না এবং কোনোদিন তার অন্নভাবও ধরবে না। সুতরাং তার পক্ষে উচ্ছবের অবস্থা বোঝা সম্ভব নয়। এইজন্য উচ্ছব তাকে বলেছিল- “তুমি কি বুঝবে সতীশবাবু?”