দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
গল্প- ভারতবর্ষ
বড় প্রশ্ন (মান ৫)
প্রশ্ন- ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর। ৫
উত্তর- সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের একটি অনবদ্য গল্প হল ‘ভারতবর্ষ’। সাহিত্যিক রচনার নামকরণ কখনো হয় প্রধান-চরিত্র কেন্দ্রিক, কখনো প্রধান ঘটনা অনুসারে, আবার কখনো নামকরণটি ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে ওঠে। আলোচ্য গল্পের নামকরণ অন্ততঃ তিনটি দিক থেকে ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে উঠেছে। যথা-
এক, ভারতবর্ষে বহু ধর্মের মানুষ বসবাস করে। তবে, তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই সম্প্রদায় হল হিন্দু এবং মুসলমান। এই দুই ধর্মের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে এবং মাঝেমাঝেই সামান্য বিষয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আলোচ্য গল্পেও দেখা যায় যে, এক অজ্ঞাতপরিচয় বৃদ্ধার মরদেহের উপর অধিকারের দাবিতে গ্রামস্থ হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল।
দুই, আমরা জননীরূপে যে দেশমাতৃকার পূজা করি, লেখক গল্পোক্ত বৃদ্ধার মধ্যে সেই ভারতাত্মাকে প্রতীকায়িত করেছেন। বৃদ্ধার মুখে দীর্ঘায়ুর চিহ্ন ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনত্বকেই ইঙ্গিত করছে। তার ছেঁড়া, নোংরা কাপড় দারিদ্র-লাঞ্ছিত ভারতজননীর কথা মনে করিয়ে দেয়। আবার, তাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গার উপক্রম দেখা দেয়, যেরকম লড়াই ভারতের ইতিহাসকে বারবার কলঙ্কিত করেছে। সর্বোপরি, গল্পের শেষে বৃদ্ধা নিজের ধর্ম প্রসঙ্গে যেরূপ হেঁয়ালি করেছে তাতে বোঝা যায় যে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাই তার একমাত্র ধর্ম।
তিন, গল্পের নাম ‘ভারতবর্ষ’। গল্পে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে এবং গল্পের শেষে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার জয়গানের মাধ্যমে সেই উত্তেজনার প্রশমন ঘটেছে। এই ধর্মনিরপেক্ষতাই ভারতবর্ষের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
উপরোক্ত তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকেই গল্পটির নামকরণ সম্পূর্ণ ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে উঠেছে। তাই বলা যায়, ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটির নামকরণ সর্বার্থে সার্থক।