আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে?

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’

Higher Secondary Bengali Short Story Bharatbarsha by Syed Mustafa Siraj || Long Questions and Answers || দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য বাংলা গল্প ‘ভারতবর্ষ’ || রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। 

প্রশ্ন- “আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে?”- কোন প্রশ্নের উত্তরে বক্তা একথা বলেছেন? গল্পানুসারে বক্তার স্বরূপ উদঘাটন কর। [১+৪]

উত্তর- সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের বুড়িটি এই কথা বলেছিল। ভিড়ের মধ্য থেকে কোনো একজন বুড়ির ধর্ম-পরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল’ “বুড়ি, তুমি হিন্দু না মুসলমান?” এই প্রশ্নের উত্তরে বুড়ি প্রশ্নোদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিল।

ভারতবর্ষ
ভারতবর্ষ

‘ভারতবর্ষ’ গল্পের বুড়ি চরিত্রটি আগাগোড়া রহস্যে ঢাকা। এক দুর্যোগপূর্ণ শীতের সকালে তার আবির্ভাব ঘটেছিল। সকলেই প্রথমে তাকে ভেবেছিল। তার পরনে ছিল ছেঁড়া, নোংরা কাপড় এবং গায়ে জড়ানো ছিল চিটচিটে তুলোর কম্বল। তার মুখে দীর্ঘ আয়ুর ছাপ।

রাক্ষুসে চেহারা এবং একমাথা সাদা চুল নিয়ে যখন চায়ের দোকানের সামনে হাজির হল, তখন তাকে দেখে সকলে অবাকই হয়েছিল। এরকম দুর্যোগের দিনে শক্তসামর্থ্য মানুষ বাড়ির বাইরে যায় না, অথচ বুড়ি কীভাবে আসতে পারল- এটা ভেবেই সবাই আশ্চর্য হয়েছিল।

বাজারের লোকজনের সঙ্গে যে যেভাবে কথা বলেছিল তাতে তাকে মেজাজি বলেই মনে হয়। আবার, চায়ের দাম মিটিয়ে সে আত্মসম্মান বোধের প্রমাণ দিয়েছিল। বটগাছের খোন্দলে আশ্রয় নিতে দেখে সবাই বুঝেছিল বুড়ি একজন বৃক্ষবাসিনী। তবে, বুড়ির প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটন করতে হলে গল্পের শেষ অংশে যেতে হবে।

বুড়ি মরে গেছে ভেবে তাকে হিন্দুরা নদীতে ফেলে দিয়ে এসেছিল। মুসলমানরা তাকে আবার নিয়ে আসে কবর দেবে বলে। তার ধর্ম নিয়ে সবার মাথাব্যাথা। তাই যখন দেখা গেল বুড়ি বেঁচে আছে, সেই সুযোগে কেউ একজন জানতে চায় যে বুড়ি হিন্দু না মুসলমান? বুড়ি ক্ষেপে গিয়ে উত্তর দিয়েছিল “চোখের মাথা খেয়েছিস মিনসেরা? দেখতে পাচ্ছিস নে?” আসলে ধর্মান্ধ মানুষের চোখে বুড়ির স্বরূপ ধরা পড়েনি। এই গল্পের বুড়ি না হিন্দু না মুসলমান- সবরকম ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে সে একজন মানুষ।

error: Content is protected !!