একাদশ শ্রেণী
বাড়ির কাছে আরশিনগর (বড় প্রশ্ন)
৪। ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় কবি কীভাবে রূপকের আশ্রয়ে দেহতত্ত্ব বর্ননা করেছেন?
উত্তর- লালন ফকিরের ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতাটিতে রূপকের আশ্রয়ে বাউল সাধনার ঈশ্বরতত্ত্ব তথা দেহতত্ত্বের কথা বলা হয়েছে। রূপক কবিতার মতো এই বাউলগানটিতেও দুরকমের অর্থ রয়েছে। সাধারণ অর্থটি হল- কবির বাড়ির কাছেই আরশিনগর নামের একটা গ্রাম আছে। সেই গ্রামে বসবাস করে একজন মানুষ- কবিতায় যাকে পড়শি বলা হয়েছে। তার শারীরিক পরিচয় দিতে গিয়ে কবি বলেছেন যে, তার ‘হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা’ কিছুই নেই। কবি তাকে দেখতে চান কিন্তু একমাত্র বাধা হল ‘অগাধ পানি’ যা আরশিনগরকে বেষ্টন করে রেখেছে। এই অগাধ পানির কোনো কিনারা নেই আর পারে কোনো মাঝিও বসে নেই। উক্ত পড়শি কবিকে ছুঁলে কবির মৃত্যুযন্ত্রণা দূর হয়ে যেত।
কবিতাটির অন্তর্নিহিত অর্থ হল- শরীরের মধ্যে যে শুদ্ধতম মন থাকে সেখানেই বাস করেন ঈশ্বর। এত কাছে থেকেও মানুষ ঈশ্বরের দর্শন পায়না। আসলে ঈশ্বর নিরাকার। তাকে উপলব্ধি করতে হলে মোহমুক্ত মন দরকার। কিন্তু মানুষের বিষয়বাসনা তার থেকে ঈশ্বরকে দূরে সরিয়ে রাখে। গানটিতে ঈশ্বর সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার অর্থ হল ঈশ্বর নিরাকার বলে সাধনমার্গের উচ্চতায় থাকেন, আবার কখনো অন্য কোনো বস্তুকে আশ্রয় করে ঈশ্বর প্রকাশিত হন। কবির কথায়- “ক্ষণেক থাকে শুন্যের উপর/ ক্ষণেক ভাসে নীরে”। এভাবেই রূপকের আড়ালে ঈশ্বরতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। (শব্দ- ১৭৪)