বাঙালির সংস্কৃতির ইতিহাসের শেষতম আলোচনা হল বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি বা বাঙালির খেলার ইতিহাস। বিশদে জানার জন্য বইটি পড়া প্রয়োজন। নীচের ভিডিওতে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য ‘বাঙালির ক্রীড়া সংস্কৃতি’ অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি তুলে ধরা হল। শর্ট-এমসিকিউ এর উত্তর দেওয়ার জন্য ভিডিওটি বিশেষ উপযোগী।
বাঙালির ক্রীড়া সংস্কৃতি
সূচিপত্র
পৃথিবীর সকল কালে সকল সমাজে খেলাধুলার অস্তিত্ব ছিল। বাংলাদেশেও বিভিন্নধরনের খেলাধুলার প্রচলন ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ খেলাই আজ অবলুপ্ত। তখনকার বিশেষ কোনো ঐতিহাসিক দলিল নেই বলে এইসমস্ত খেলা সম্পর্কে জানার কোনো উপায় নেই। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে যেসব খেলা প্রচলিত আছে সেগুলির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং প্রধান প্রধান খেলোয়াড় নিয়ে এই অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে।
বাংলার প্রাচীন খেলাধুলো
প্রাচীন বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি খেলা হল- নৌকাবাইচ, বউছি, গোল্লাছুট, গোলাপ-টগর, বাঘবন্দি, রুমালচুরি, লাঠিখেলা, লুকোচুরি প্রভৃতি অজস্র খেলা। এগুলির কোনো কোনোটি একদম ছেলেমানুষের খেলা কোনোটি মেয়েদের আবার কোনো খেলা পুরুষদের জন্য। বিভিন্ন সামাজিক সমারোহে বিভিন্ন রকম খেলার চল ছিল। যেমন আগেকার বাঙালি বিবাহ উৎসবে পাশা খেলার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। তেমনি মহরমের ক্রীড়াকৌশল সকলে উপভোগ করত।
উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে শিক্ষিত বাঙ্গালিদেরও খেলার পৃষ্ঠপোষকতা করতে দেখা যায়। ১৮৬৭ সালে প্রথম আয়োজিত হিন্দুমেলায় খেলাধুলার ব্যাপার না থাকলেও পরের বছর থেকে লাঠি খেলা এবং ব্যায়াম প্রদর্শনের ব্যাবস্থা হয়। যাইহোক, বহুযুগ অতিক্রম করে বাঙালি আজ সব খেলাতেই সমান পারদর্শী। সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক বাংলায় প্রচলিত বিভিন্ন খেলার নানান কথা-
কুস্তিতে বাঙালি
উনিশ শতকে বাংলাদেশে কুস্তি ছিল ‘বাবু’ সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ। বিভিন্ন আখড়াই নিয়মিত কুস্তি চর্চা হত। কয়েকজন কুস্তিবিদ হলেন- গোবর গুহ (আসল নাম- যতীন্দ্রচরণ গুহ), ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত, গামা পালোয়ান, বিশ্বশ্রী মনোতোষ রায় প্রমুখ।
ফুটবলে বাঙালি
বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী। সেন্টার ফরওয়ার্ডের এই খেলোয়াড় বাংলা তথা ভারতে ফুটবল খেলাকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। অন্যান্য বিখ্যাত বাঙালি ফুটবলার- গোষ্ঠ পাল, শৈলেন মান্না, চুনী গোস্বামী, পিকে ব্যানার্জী প্রমুখ।
ফুটবল ক্লাব- ক্যালকাটা এফ সি (১৮৭২- এটি বাংলা তথা ভারতের প্রথম ফুটবল ক্লাব), শোভাবাজার ক্লাব (১৮৮৭), মোহনবাগান (১৮৮৯), মহামেডান (১৮৯২), ইস্টবেঙ্গল (১৯২০) প্রমুখ।
বাঙালির ক্রিকেট
ইংল্যান্ডের ‘ক্লাববল’ খেলা থেকে ক্রিকেটের জন্ম। অনেকে অবশ্য বলেন ফ্রান্সের ‘কর্কেট’ খেলা থেকে ক্রিকেটের জন্ম। কয়েকজন বিখ্যাত বাঙালি ক্রিকেটার- রাজকুমার হিতেন্দ্র নারায়ণ (ইনি প্রথম বাঙালি হিসেবে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে খেলেছিলেন), সারদারঞ্জন রায়চৌধুরি (ইনি ‘ক্রিকেট খেলা’ নামক বই লিখেছিলেন), এস এন ব্যানার্জি, পঙ্কজ রায়, অম্বর রায়, প্রবীর সেন, সি এস নাইডু প্রমুখ।
সাঁতারে বাঙালি
ডি ডি মুলজি প্রথম ভারতীয় সাঁতারু যিনি আমস্টারডাম অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে তৈরি হয় ‘সুইমিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’। প্রথম বাঙালি সাঁতারু মিহির সেন ১৯৫৮ সালে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার কেটে পার হন। ১৯৫৯ সালে প্রথম এশীয় মহিলা হিসেবে আরতি সাহা ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন।
হকি খেলা
ফ্রান্সে ‘হকেট’ নামের যে খেলাটি প্রচলিত ছিল সেটিই পরবর্তীকালে হকি নামে পরিচিত হয়। ভারতীয় হকি দল পরপর ছ’টি অলিম্পিকে বিজয়ী হয়েছিল। ভারতের বিখ্যাত হকি খেলোয়াড় ধ্যানচাঁদ। তার আত্মজীবনীর নাম ‘গোল’।
টেবিল টেনিস
একদা এই খেলার নাম ছিল পিং পং। বাংলা টেবিল টেনিসের ক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম হল- ভারতী ঘোষ, অঙ্কিতা দাস, মৌমা দাস, মান্তু ঘোষ, কস্তুরি চক্রবর্তী প্রমুখ।
লন টেনিস
এই খেলাটি ‘লা পাম’ নামে ফ্রান্সে প্রচলিত ছিল। পরে সারা বিশ্বে এই খেলা ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকজন ভারতীয় খেলোয়াড় হলেন- মহেশ ভূপতি, লিয়েন্ডার পেজ প্রমুখ।
দাবা
রামায়ণ অনুসারে রাবণ-পত্নী মন্দোদোরী দাবা খেলার প্রচলন করেন। যাইহোক দাবা খেলার জন্ম যে ভারতে তা আজ সকলে একবাক্যে স্বীকার করেন। কয়েকজন বিখ্যাত বাঙালি দাবাড়ু হলেন- দিব্যেন্দু বড়ুয়া(প্রথম বাঙালি গ্র্যান্ডমাস্টার), সুর্যশেখর গাঙ্গুলি, সন্দীপন চন্দ, নীলোৎপল দাস প্রমুখ।
অন্যান্য খেলা
১। খো খো– এই খেলার কয়েকজন বিখ্যাত খেলোয়াড়- ফণী ভট্টাচার্য, দিলীপ রায়, প্রণব রায় প্রমুখ।
২। ভলিবল– এই খেলার আদি নাম ‘মিশোটোনেট’। শিবপ্রসাদ ঘোষাল, হরিপদ ঘোষ, প্রভাত মৌলিক প্রমুখ এই খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
৩। ব্যাডমিন্টন– মনোজ গুহ, দীপু ঘোষ, মধুমিতা গোস্বামী প্রমুখ বাঙালি ব্যাডমিন্টন খেলায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
৪। কবাডি– কবাডি খেলায় স্বনামধন্য কয়েকজন বাঙালি- অচিন্ত্য সাহা, রনজিত ধর প্রমুখ।
৫। তিরন্দাজি– বিখ্যাত খেলোয়াড়- দোলা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়।
৬। অ্যাথলিটিকস– বাংলার সেরা অ্যাথলিটদের মধ্যে অন্যতম- জ্যোতির্ময়ী শিকদার যিনি এশিয়াডে প্রথম স্বর্ণজয়ী। এছাড়া উল্লেখযোগ্য নাম- নীলিমা ঘোষ, সোমা দত্ত প্রমুখ।
৭। শুটিং– জয়দীপ কর্মকার, কুহেলী গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ এই খেলার সঙ্গে যুক্ত।
৮। পর্বতারোহণ– বিশ্বদেব বিশ্বাস, সত্যব্রত দাম, অমুল্য সেন প্রমুখ বাঙালি পর্বতারোহী।
৯। ব্রতচারী– ব্রতচারীর প্রবর্তক গুরুসদয় দত্ত। পাঁচটি ব্রত হল- জ্ঞান, শ্রম, সত্য, একতা ও আনন্দ।
১০। সার্কাস– নবগোপাল মিত্রের ‘ন্যাশনাল সার্কাস’ হল প্রথম কোনো বাঙালির সার্কাস। তবে সার্কাসের ইতিহাসে যিনি সবথেকে প্রসিদ্ধ তার নাম প্রিয়নাথ বসু। তার সার্কাসের নাম- ‘গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’।
১১। ম্যাজিক– বাংলাদেশে আধুনিক ম্যাজিকের জনক গণপতি চক্রবর্তী। তার শিষ্য প্রতুলচন্দ্র সরকার বা পি সি সরকার জগতবিখ্যাত হয়েছিলেন।
পরিশেষে বলা প্রয়োজন, এই ক্ষুদ্র পরিসরে বাংলার ঐতিহ্যময় ক্রীড়াসংস্কৃতির পরিচয় দেওয়া সম্ভব নয়। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য আলোচ্য অধ্যায়ের সারবস্তুটুকু তুলে ধরা হল। বিশদে জানার জন্য বইটি পড়া দরকার।
বড় প্রশ্ন
- ব্রতচারী সম্পর্কে আলোচনা কর।
- বাঙালি ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলি
- বাঙালির ফুটবল খেলার ঐতিহ্য
- সার্কাসে বাঙালির অবদান
- সংক্ষেপে বাঙালির কুস্তি চর্চার পরিচয়
- বাঙালির কুস্তি- গোবর গুহের অবদান
- ক্রিকেটে বাঙালির অবদান
- সাঁতারে বাঙালিদের অবদান
- দাবা খেলায় বাঙালির অবদান
- সাঁতারে আরতি সাহার অবদান
এমসিকিউ টেস্ট
বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে বাছাই করা এমসিকিউ প্রশ্নের মক টেস্ট টেস্ট দেওয়ার পর জানা যাবে কতগুলি উত্তর সঠিক এবং কতগুলি ভুল। এইভাবে নিজের প্রস্তুতি কেমন সেটাও জানা সম্ভব।