ক্রিয়াপদ

ক্রিয়াপদ

ক্রিয়া শব্দের অর্থ হলো কাজ। যে পদের দ্বারা কোনো কিছু করা, হওয়া বা থাকা বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন-
১) রাজীব বই পড়ছে
২) ভারতে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়
৩) আমাদের একটি পোষা কুকুর আছে

ধাতু ও ক্রিয়াপদ

ধাতু ও ক্রিয়া

ক্রিয়ার মূল অংশ হল ধাতু। ধাতুর সঙ্গে ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন- “আয়েষা পড়াশোনা করছে” এই বাক্যে ‘করছে’ ক্রিয়াপদটি এসেছে ‘কর্’ ধাতুর সঙ্গে ‘ছে’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে।

ক্রিয়াপদের প্রকারভেদ

ক্রিয়াপদকে বিভিন্ন মাপকাঠিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: (ক) ক্রিয়াপদের গঠন অনুসারে, (খ)ক্রিয়াপদের অবস্থা অনুসারে এবং (গ) ক্রিয়াপদের অম্বয়গত শ্রেণিবিভাগ। প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক গঠন অনুসারে ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাজন।

গঠন অনুসারে ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ

১) মৌলিক ক্রিয়া– ক্রিয়ার মূল হল ধাতু। যে ধাতু অবিভাজ্য, (অর্থাৎ ,যাকে বিশ্লেষণ করা যায় না) তাকে মৌলিক ধাতু বা সিদ্ধ ধাতু বলে। মৌলিক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করে যে ক্রিয়াপদ নিষ্পন্ন হয় তাকে বলা হয় মৌলিক ক্রিয়া। যেমন- ছেলেটি বই পড়ছে (√পড়্+ছে)।

২) সাধিত ধাতুজ ক্রিয়া– শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় যোগ করে যে ধাতু পাওয়া যায় তাকে বলে সাধিত ধাতু। যেমন- (√কর্+আ= করা) সাধিত ধাতু থেকে যে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয় তাকে সাধিত ধাতুজ ক্রিয়া বলে। সাধিত ধাতুজ ক্রিয়া আবার তিন প্রকার-

ক) প্রযোজক ক্রিয়া– মৌলিক ধাতুর সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে প্রযোজক ধাতু পাওয়া যায়। কর্তা ব্যতীত অন্যের প্রযোজনায় বা প্রেরণায় কোনো ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে বোঝাতে প্রযোজক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া বিভক্তি যোগ করে যে ক্রিয়াপদ গঠন করা হয় তাকে বলে প্রযোজক ক্রিয়া। যেমন- শিক্ষকমহাশয় ছাত্রদের বাংলা পড়াবেন [√পড়্ (মৌলক ধাতু) + আ (ধাত্ববয়ব প্রত্যয় + বেন (প্রথম পুরুষের ভবিষ্যৎ কাল বাচক ক্রিয়াবিভক্তি)] আরো উদাহরণ-
১. কর্তাবাবু নরনারায়ণ সেবা করাচ্ছেন।
২. অনিমেষবাবু অংক শেখাচ্ছেন।
৩. মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছে।

খ) নামধাতুজ ক্রিয়া– নামপদের সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে নামধাতু গঠিত হয়। এই নামধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করে যে ক্রিয়াপদ পাওয়া যায় তাকে নামধাতুজ ক্রিয়া বলা হয়। যেমন- কে যে কলমটা হাতাল কে জানে! বাক্যটির ক্রিয়াপদ হাতাল= হাত (নামপদ) + আ (ধাত্ববয়ব প্রত্যয়) + ল (প্রথম পুরুষের অতীতকাল বাচক ক্রিয়াবিভক্তি)। আরো উদাহরণ-
১. যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু।
২. কর্তাবাবু তোমাকে জুতাবে।
৩. উত্তরিলা বিভীষণ।

গ) ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া– ধ্বন্যাত্মক শব্দের সঙ্গে ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত করে যে ক্রিয়া পদ গঠিত হয় তাকে ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া বলে। যেমন- মাছিগুলা ভনভনাচ্ছে। (ভনভন হল ধ্বন্যাত্মক শব্দ)

৩) সংযোগমূলক ক্রিয়া– নামপদ অথবা অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে একটি মৌলিক ক্রিয়ার সংযোগে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয় তাকে সংযোগমূলক ক্রিয়াপদ বলা হয়। যেমন- আবার তোরা মানুষ হ (মানুষ নামপদ এবং হ মৌলিক ক্রিয়া)। সংযোগমূলক ক্রিয়া আবার দু’রকমের-

ক) যুক্ত ক্রিয়া– একটি নামপদের সঙ্গে একটি মৌলিক ক্রিয়া যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠন করে তাকে যুক্ত ক্রিয়া বলে। যেমন-
১. ছেলেটাকে ঠিক মতো মানুষ কর।
২. আগে বিনয়ী হও।
৩. একটু বিশ্রাম নাও।

খ) যৌগিক ক্রিয়া– একটি অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে একটি মৌলিক ক্রিয়া যোগ করে যে ক্রিয়াপদ পাওয়া যায় তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন-
১. কিছু খেতে দাও।
২. সামনে গেলেই মারতে আসছে।
৩. পড়াশোনা চালিয়ে যাও।

ক্রিয়াপদের অবস্থা অনুসারে

বাক্যে ক্রিয়াপদটি কোন অবস্থায় রয়েছে বা কীরকম ভূমিকা পালন করছে তার ভিত্তিতে ক্রিয়াপদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

১) সমাপিকা ক্রিয়া– ক্রিয়াপদটি যদি বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ করতে পারে, তবে তাকে বলা হয় সমাপিকা ক্রিয়া। যেমন- রাম বই পড়ছে। ‘পড়ছে’ ক্রিয়াপদটি বলার পর বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ হচ্ছে, তাই এটি সমাপিকা ক্রিয়া।

২) অসমাপিকা ক্রিয়া– ক্রিয়াপদটি যদি বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ করতে না পারে, তবে তাকে বলা হয় অসমাপিকা ক্রিয়া। যেমন- রাম জলখাবার খেয়ে বই পড়ছে। এই বাক্যে দুটি ক্রিয়াপদ- খেয়ে এবং পড়ছে। ‘রাম জলখাবার খেয়ে’ পর্যন্ত বলে বাকি অংশটা না বললে বাক্যটির অর্থ সম্পূর্ণ হতো না। তাই ‘খেয়ে’ হল অসমাপিকা ক্রিয়া।

ক্রিয়াপদের অম্বয়গত শ্রেণিবিভাগ

ক্রিয়াপদটির কর্ম আছে না নেই তার উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল- ১) সকর্মক এবং ২) অকর্মক। প্রচলিত ব্যাকরণ বইগুলিতে সকর্মক এবং অকর্মক ক্রিয়া বিষয়ে অনেক ভুল তথ্য দেওয়া আছে বলেই ছাত্রছাত্রীরা বিভ্রান্ত হয়। তাই, বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে জানা উচিত কর্ম বলতে ঠিক কী বোঝায়? কর্তা যার উপর ক্রিয়া সঞ্চার করে তাকে বলে কর্ম। যেমন, রাম বই পড়ছে- এই বাক্যে কর্তা রাম এবং তার ক্রিয়া হল পড়া। পড়ছে এমন একটি কাজ যা শুধু শুধুই হয় না, একটি মাধ্যম লাগে। পড়ছে মানে কিছু একটা তো পড়ছে। এই কিছু একটাই হল কর্ম। আলোচ্য বাক্যে কর্মটি হল ‘বই’।

১) অকর্মক ক্রিয়া– যে ক্রিয়াপদ কোনো কর্ম ধারণ করতে পারে না, তাকে অকর্মক ক্রিয়া (Intransitive Verb) বলে। যেমন- যাওয়া, ঘুমানো ইত্যাদি। বাক্যে প্রয়োগ করলে হবে-
মেয়েটি স্কুল যাচ্ছে।
শিশুটি ঘুমোচ্ছে।

২) সকর্মক ক্রিয়া– যে ক্রিয়াপদ কর্ম ধারণ করতে পারে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া (Transitive verb) বলে। যেমন- পড়ছে, লিখছে, ডাকা ইত্যাদি ক্রিয়া হল সকর্মক ক্রিয়া। অর্থাৎ, এরা কর্ম ধারণ করতে পারে। তবে, বাক্যে কর্মের উল্লেখ নাই থাকতে পারে বা উহ্য থাকতে পারে, কিন্তু সেক্ষেত্রেও ক্রিয়াটিকে অকর্মক বলা যাবে না। যেমন, ধরা যাক- দীপু একটি চিঠি লিখছে। এই বাক্যে ‘লিখছে’ ক্রিয়াপদটির কর্ম হল ‘একটি চিঠি’। যদি বলা হত, দীপু লিখছে- এখানে কোনো কর্মের উল্লেখ করা হল না। কিন্তু লিখছে মানে তো কিছু একটা লিখছে। এই কিছু একটাই হল কর্ম- তার উল্লেখ থাক বা না থাক। সুতরাং, বাক্যে কর্মের উল্লেখ রইল বা না রইল তার উপর ক্রিয়ার সকর্মত্ব বা অকর্মত্ব নির্ভর করে না। সকর্মক ক্রিয়া সকর্মকই হয়, অকর্মক ক্রিয়া সকর্মক হতে পারে না। আরো একটি উদাহরণ দেখা যাক-

মিতা ঘুমোচ্ছে – এই বাক্যে ক্রিয়াপদ হল ঘুমোচ্ছে। ঘুমানো ক্রিয়াটি অকর্মক ক্রিয়া। অকর্মক ক্রিয়া কর্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কোনো বস্তু বা ব্যক্তির মধ্যে কিছু সঞ্চার করার প্রয়োজন হয় না। তাই প্রশ্ন করা যাবে না যে মিতা কী ঘুমোচ্ছে বা কাকে ঘুমোচ্ছে। তাই হাজার চেষ্টা করলেও অকর্মক ক্রিয়াকে সকর্মক করা যাবে না।

আবার, যদি কোনো ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম ধারণ করার ক্ষমতা থাকে, তবে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলা হয়। মনে রাখতে হবে যে, সব সকর্মক ক্রিয়া দ্বিকর্মক ক্রিয়া নয়; গুটিকয়েক ক্রিয়া রয়েছে যেগুলি দুটি কর্ম ধারণ করতে পারে। যেমন, ‘দেওয়া’ একটি দ্বিকর্মক ক্রিয়া। “সে আমাকে একটি কলম দিল”- এই বাক্যে ‘দিল’ ক্রিয়াপদটির দুটি কর্ম রয়েছে- আমাকে এবং একটি কলম।

পঙ্গু ক্রিয়া এবং পঙ্গু ধাতু

যেসব ক্রিয়ার তিনটি কালের (বর্তমান, অতীত, ভবিষ্যৎ) রূপ পাওয়া যায় না তাদেরকে পঙ্গু ক্রিয়া বলে। পঙ্গু ক্রিয়ার ধাতুকে বলা হয় পঙ্গু ধাতু। আছ্ ধাতু, যা ধাতু ইত্যাদি হল পঙ্গু ধাতুর উদাহরণ। এগুলি বাক্যে প্রয়োগ করে দেখা যাক।

আমি আছি, আমি ছিলাম, আমি থাকবো।
আমি যাই, আমি গিয়েছিলাম, আমি যাবো।

প্রথম বাক্যে, ‘আছ্’ ধাতু থেকে বর্তমান এবং অতীত কালের রূপদুটি পাওয়া গেছে কিন্তু ভবিষ্যৎ কালের রূপ পাওয়া যায়নি। তাই ‘থাক্’ ধাতু থেকে সাহায্য নিতে হয়েছে। দ্বিতীয় বাক্যে ‘যা’ ধাতু থেকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের রূপ পাওয়া গেছে কিন্তু অতীত কালের রূপ পাওয়া যায়নি।

ক্রিয়ার কাল

ক্রিয়া যে সময় সংঘটিত হয় বা সম্পন্ন হয় তাকে ক্রিয়ার কাল বলে। কাল কথার অর্থ হল সময়। ক্রিয়ার কাল মূলত তিনটি- বর্তমান, অতীত এবং ভবিষ্যৎ। এই তিনটি কালের আবার চারটি করে উপভাগ রয়েছে।

বর্তমান কাল

কোনো ক্রিয়া বর্তমানে সংঘটিত হচ্ছে এরূপ বোঝাতে যে কাল হয় তাকে বর্তমান কাল বলা হয়। বর্তমান কাল হল বর্তমান সময়। যা ঘটে, যা ঘটেছে এবং যা একটু আগে ঘটে গেছে কিন্তু এখনো রেশ রয়ে গেছে তাই বর্তমান কাল।বর্তমান কালের চারটি উপভাগ হল-

১) সাধারণ বর্তমান- কোনো ক্রিয়া নিত্য সংঘটিত হয় এরূপ বোঝাতে ক্রিয়ার যে কাল হয় তাকে সাধারণ বর্তমান বলে। যেমন-
ক) নেহা টিভি দেখে।
খ) গরুটি ঘাস খায়।

২) ঘটমান বর্তমান- কোন ক্রিয়া বর্তমানে সংঘটিত হচ্ছে এরূপ বোঝাতে ক্রিয়ার যে কালো হয় তাকে ঘটমান বর্তমান বলা হয়। যেমন-
ক) নেহা টিভি দেখছে।
খ) গরুটি ঘাস খাচ্ছে।

৩) পুরাঘটিত বর্তমান- কোনো ক্রিয়া পূর্বেই সম্পন্ন হয়ে গেছে কিন্তু তার ফল এখনো বর্তমান, এরূপ বোঝাতে ক্রিয়ার যে কাল হয় তাকে পুরাঘটিত বর্তমান বলে। যেমন-
ক) নেহা টিভি দেখেছে।
খ) গরুটি ঘাস খেয়েছে।

৪) বর্তমান অনুজ্ঞা- বর্তমান কালে কোনো আদেশ, অনুরোধ বা উপদেশ বোঝাতে ক্রিয়ার যে রূপভেদ হয় তাকে বর্তমান অনুজ্ঞা বলা হয়। যেমন-
ক) টিভি দেখ (দ্যাখ)।
খ) টিভি দেখো (দ্যাখো)।
গ) টিভি দেখুন।

[বর্তমান অনুজ্ঞা এবং ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা প্রকৃতপক্ষে কোনো কাল নয়, ক্রিয়ার ভাব বিশেষ। কিন্তু প্রচলিত ব্যাকরণে এই দুই অনুজ্ঞা দুটি কাল হিসেবে বিবেচিত হয়।]

অতীত কাল

কোনো ক্রিয়া অতীতকালে সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং বর্তমানে তার কিছু অবশিষ্ট নেই, এরূপ বোঝাতে ক্রিয়ার যে কাল তাকে বলা হয় অতীতকাল। অতীতকালের রূপ এই চারটি-

১) সাধারণ অতীত- কোনো ক্রিয়া অতীতকালে সম্পন্ন হয়ে গেছে, এরূপ বোঝাতে ক্রিয়ার যে কাল হয় সেটিই হল সাধারণ অতীত। যেমন-
ক) নেহা টিভি দেখল।
খ) গরুটি ঘাস খেল।

২) ঘটমান অতীত- অতীতের কোনো একটি বিশেষ কালপর্বে কোনো ক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছিল, এরূপ বোঝাতে ক্রিয়ার কাল হয় তাকে ঘটমান অতীত বলা হয়। যেমন-
ক) নেহা টিভি দেখছিল।
খ) গরুটি ঘাস খাচ্ছিল।

৩) পুরাঘটিত অতীত- অতীত কালে যদি দুটি ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তবে তাদের মধ্যে যেটি প্রথমে হয় সেই ক্রিয়ার কালটি পুরাঘটিত অতীত হয়। তবে, অনেক সময় সাধারণ অতীত বোঝাতেও পুরাঘটিত অতীতের রূপটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কারণ, এই দুটি কালের মধ্যে অর্থগত কোন পার্থক্য নেই। যেমন-
ক) পড়তে বসার আগে নেহা টিভি দেখেছিল।
খ) গোয়ালে ঢোকার আগে গরুটি ঘাস খেয়েছিল।
[দেখল, দেখেছিল এবং খেলো, খেয়েছিল- এই ক্রিয়াগুলির মধ্যে অর্থগত কোন পার্থক্য নেই। ইংরেজিতে Past Perfect Tense-এর অনুকরণে বাংলায় পুরাঘটিত অতীত কালের আমদানি হয়েছে।]

৪) নিত্যবৃত্ত অতীত- অতীতকালে কোনো কাজ নিয়মিত ঘটত, এরূপ বোঝাতে ক্রিয়াপদের যে কাল হয় তাকে নিত্যবৃত্ত অতীত বলা হয়। যেমন-
ক) নেহা টিভি দেখত।
খ) গরুটি ঘাস খেত।

ভবিষ্যৎ কাল

যে ক্রিয়া এখনো সংঘটিত হয়নি, ভবিষ্যতে হবে, এরূপ বোঝাতে ক্রিয়াপদের যে কাল হয়, তাকে ভবিষ্যৎ কাল বলা হয়। কিন্তু কেউ ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টা নয়, এইজন্য অনেক পণ্ডিত ভবিষ্যৎ কালের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে চান না। যাইহোক, ভবিষ্যৎ কাল এই চার রকমের হয়-

১) সাধারণ ভবিষ্যৎ- ভবিষ্যতে কোন ক্রিয়া সংঘটিত হবে, এরূপ বোঝাতে ক্রিয়ার যে কাল হয় তাকে সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল বলা হয়। যেমন-
ক) নেহা টিভি দেখেবে।
খ) গরুটি ঘাস খাবে।

২) ঘটমান ভবিষ্যৎ- ভবিষ্যতের একটি নির্দিষ্ট কালপর্বে কোনো ক্রিয়া সংঘটিত হবে, এরূপ বোঝাতে ক্রিয়ার যে কাল হয় তাকে ঘটমান ভবিষ্যৎ বলা হয়। যেমন-
ক) নেহা টিভি দেখেতে থাকবে।
খ) গরুটি ঘাস খেতে থাকবে।

৩) পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ- ভবিষ্যতে কনো একটি কাজ হয়ে থাকবে, এরূপ সংশয় বোঝাতে পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল হয়। 

ক) নেহা টিভি দেখে থাকবে।
খ) গরুটি ঘাস খেয়ে থাকবে।

৪) ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা- ভবিষ্যৎ কালের কোনো আদেশ, অনুরোধ বা উপদেশ বোঝাতে ক্রিয়ার যে কাল হয়, তাকে ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা বলা হয়। যেমন-
ক) টিভি দেখবি।
খ) টিভি দেখবে।
গ) টিভি দেখবেন।

ক্রিয়ার প্রকার

বাংলা ক্রিয়াপদকে আরো একটি মাপকাঠিতে শ্রেণিকরণ করা হয়। সেটি হল ক্রিয়ার প্রকার। ক্রিয়ার প্রকারের ভিত্তি হল ক্রিয়ার কাল। ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে নাকি হয়নি, এইরূপ বিচারে ক্রিয়াপদের বিভাজনকে বলা হয় ক্রিয়ার প্রকার (Aspect of Verb)। বাংলা ব্যাকরণে ক্রিয়ার প্রকার পাঁচটি। প্রকারের ভিত্তি হল কাল কিন্তু প্রকার নির্ণয় করার সময় কাল উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। নীচে প্রথম পুরুষে ‘পড়’ ধাতু সহযোগে পাঁচটি প্রকারে ক্রিয়ার কেমন রূপ হবে তা তুলে ধরা হল। 

১) সাধারণ– পড়ে, পড়ল, পড়বে। 

২) ঘটমান– পড়ছে, পড়ছিল, পড়তে থাকবে। 

৩) পুরাঘটিত-পড়েছে, পড়েছিল, পড়ে থাকবে।

৪) নিত্যবৃত্ত– পড়ত।

৫) অনুজ্ঞা– পড়, পড়বে। 

ক্রিয়াপদের সঙ্গে যুক্ত কালবাচক বিভক্তি দেখে প্রকার নির্নয় করা হয়। সে পড়ছে, আমি খাচ্ছি, তুমি টিভি দেখছিলে, তিনি ঘুমোচ্ছিলেন- এই সব ক্ষেত্রেই ক্রিয়ার প্রকার হবে ঘটমান। 

বিশেষণ সূচিপত্র অব্যয়

error: Content is protected !!