অব্যয়
সূচিপত্র
অব্যয় কথাটির সাধারণ অর্থ হল নাই ব্যয় যার। অব্যয়ের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলা হয়, যে পদের বচন, লিঙ্গ, বিভক্তি এবং পুরুষভেদে কোন ব্যয় বা ক্ষয় বা পরিবর্তন ঘটে না সেই পদকে অব্যয় বলা হয়। এই সংজ্ঞাটি সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে নেওয়া। কারণ, বাংলায় লিঙ্গ এবং বচনের জন্য কোনো শব্দের রূপ পরিবর্তন হয় না। সংস্কৃত শব্দরূপ এবং ধাতুরূপে লিঙ্গ, বচনের ভূমিকা থাকে, ইংরেজিতেও রয়েছে। যেমন- I read book হয় কিন্তু He reads book হয়; আবার, They read book হয়। ইংরেজিতেও পুরুষ, বচন ইত্যাদির ভূমিকা রয়েছে। যাইহোক, বাংলায় অব্যয়ের সংজ্ঞা হবে- তিন পুরুষ এবং তিন কালে যে পদের কোনরূপ ব্যয় বা ক্ষয় বা পরিবর্তন ঘটে না তাকে অব্যয় বলা হয়।
অব্যয়ের শ্রেণিবিভাগ
অব্যয়কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। তবে, মূলত চারটি ভাগে অব্যয়কে ভাগ করা হয়। সেগুলি হল-
[১] পদাম্বয়ী অব্যয়
যে অব্যয় বাক্যের দুটি পদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন করে, তাকে বলা হয় পদাম্বয়ী অব্যয়। যেমন-
উপমা বা সাদৃশ্যবাচক- মতো, মতন, সম, ন্যায়, পারা ইত্যাদি।
সীমাবাচক- হইতে, থেকে, পর্যন্ত, অবধি, যাবৎ ইত্যাদি।
স্থানবাচক- উপরে, নীচে, সঙ্গে, পাশে ইত্যাদি।
ব্যতিরেকবাচক- বিনা, ছাড়া, ব্যতীত, বই, বাদে ইত্যাদি।
[২] সমুচ্চয়ী অব্যয়
যে অব্যয় দুই বা তার বেশি পদ, বাক্যাংশ বা বাক্যকে যুক্ত করে তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলা হয়। যেমন-
সংযোজক- ও, আর, এবং, তথা ইত্যাদি।
বিয়োজক- কিংবা, অথবা, বা, নতুবা ইত্যাদি।
সংকোচক- কিন্তু, তবু, অথচ, বরং, তথাপি ইত্যাদি।
হেত্বর্থক বা হেতুবাচক- কেননা, যেহেতু, কারণ, বলে ইত্যাদি।
সাপেক্ষ বা নিত্যসম্বন্ধী- হয়- নয়, যদি- তবুও, যেমন- তেমন ইত্যাদি।
সিদ্ধান্তসূচক- তাই, কাজেই, সুতরাং ইত্যাদি।
[৩] অনম্বয়ী অব্যয়
যে অব্যয়পদের সঙ্গে বাক্যের অন্য কোনো পদের অন্বয় বা সম্বন্ধ থাকে না, তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলা হয়। যেমন-
আবেগসূচক- বাঃ, ছি!, ইস্, যাঃ, হায় হায় ইত্যাদি।
সম্বোধনবাচক- ওহে, হে, ওগো, ওলো ইত্যাদি।
অলংকারিক- যেসকল অব্যয় বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করে না, অলংকারের মতো বাক্যের শোভা বৃদ্ধি করে তাদেরকে অলংকারিক অব্যয় বলা হয়। যেমন- এক যে ছিল রাজা। এই বাক্যে ‘যে’ পদটি অলংকারিক অব্যয়।
সম্মতিসূচক- হ্যাঁ, হুম, হ, আচ্ছা ইত্যাদি।
অসম্মতিসূচক- না, নানা, উঁহু ইত্যাদি।
[৪] ধ্বন্যাত্মক অব্যয়
যে অব্যয় ধ্বনির অনুকরণে গড়ে ওঠে, তাকে ধনাত্মক অব্যয় বলা হয়। কতকগুলি ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে সৃষ্ট। যেমন- দুমদাম (পতনের শব্দ), ঝমঝম (বৃষ্টির শব্দ), ঘেউঘেউ (কুকুরের ডাক) ইত্যাদি। আবার, ধ্বন্যাত্মক অব্যয় অনেকসময় অব্যক্ত ভাবও প্রকাশ করে। যেমন- ধুধু (শূন্যতা), রীরী (রাগ), ম্যাজম্যাজ (অসুস্থতা) ইত্যাদি।