সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল চিত্রকলা। বাঙালির চিত্রকলা জগৎ বিখ্যাত। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যাতে বাঙালির চিত্রকলার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে সেইজন্য দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসুচিতে বাঙালির চিত্রকলা অধ্যায়টি যুক্ত হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে। যাইহোক, নীচের ভিডিওটি দেখলে এই অধ্যায় থেকে যেকোনো শর্ট-এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে। একইসঙ্গে বড় প্রশ্ন সম্পর্কেও ধারণা তৈরি হবে।
বাঙালির চিত্রকলা
সূচিপত্র
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস বেশ পুরাতন। পালযুগে বাংলাদেশে চিত্রকলা চর্চা হত তার কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। ‘অষ্টসহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতার’ পুথিতে ১২ টি ছবি পাওয়া গেছে। পরবর্তীকালে অর্থাৎ সুলতানি আমলেও চিত্রকলা চর্চার কিছু নমুনা পাওয়া যায়। মধ্যযুগের বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে মুর্শিদাবাদের নাম বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ।
বাংলা চিত্রকলার আলোচনায় পটশিল্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কাপড়ের উপর বিভিন্ন বিষয়ের চিত্র আঁকা হত। সারা বাংলাদেশে পটশিল্পের প্রচলন ছিল। এছাড়াও বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাস বিশেষ ঐতিহ্যপূর্ন।
শিল্প শিক্ষা প্রতিস্থান
ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা পাবার পর এদেশে চিত্রকলা চর্চা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এই সময় বেশ কয়েকটি আর্টস্কুল স্থাপিত হয়েছিল যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘Society for the Promotion of Industrial Art’, ‘The Calcutta School of Industrial Art’, Government School of Art and Craft’, ‘Indian Society of Oriental Art’, Jubilee Art Academy’ প্রভৃতি।
কয়েকজন বাঙালি চিত্রশিল্পি
অন্নদাপ্রসাদ বাগচী (১৮৪৯-১৯০৫)- Government School of Art and Craft -এর কৃতী ছাত্র। ইনি ইউরোপীয় চিত্ররীতির নিপুণভাবে প্রয়োগ করেছিলেন।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১)- অবনীন্দ্রনাথের চিত্রকলার পাঠ শরু হয় তৎকালীন আর্ট স্কুলের শিক্ষক ইতালীয় শিল্পী গিলার্ডির কাছে। তার বিখ্যাত চিত্রগুলি হল- ‘শাজাহানের অন্তিমকাল’‘বুদ্ধ ও সুজাতা’ (১৯০১), কালীদাসের ঋতুসঙ্ঘার বিষয়ক চিত্রকলা (১৯০১), ‘চতুর্ভূজা ভারতমাতা’ (১৯০৫), ‘কচদেবযানি’ (১৯০৬), ‘শেষযাত্রা’ (১৯১৪)। জাপানী প্রভাবে অবনীন্দ্রনাথ অঙ্কন করেন তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘ওমর খৈয়াম’ (১৯৩০)চিত্রাবলী।
নন্দলাল বসু (১৮৮২-১৯৬৬)- অবনীন্দ্রনাথের শিষ্য এবং কলাভবনের অধ্যক্ষ। তিনি প্রথম শিল্পশিক্ষায় নেচার স্টাডি বা প্রকৃতি পর্যবেক্ষনের উপর জোর দেন।
যামিনী রায় (১৮৮৭-১৯৭২)- কলকাতা আর্ট স্কুলের ছাত্র। অন্যতম চিত্রকর্ম- গোপিনী, কৃষ্ণবলরাম, রাধা কৃষ্ণ নৃত্য, গোপিনিদের সঙ্গে কৃষ্ণের নৃত্য, রাবণ সীতা ও জটায়ু, মা ও শিশু প্রভৃতি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)- জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে কবিগুরু চিত্রশিল্পচর্চা শুরু করলেন। আর খুব কম সময়ের মধ্যে তিনি চিত্রশিল্পে নিজের পরিচিতি অর্জন করেছিলেন।
রামকিঙ্কর বেইজ (১৯১০-১৯৮০)- একাধারে ভাস্কর এবং চিত্রশিল্পী। বিখ্যাত ছবি- ‘লেডি উইথ ডগ’, ‘যক্ষ-যক্ষী’, ‘সুজাতা’, ‘সাঁওতাল দম্পতি’, ‘মিলকল’ প্রভৃতি।
হেমেন মজুমদার (১৮৯৪-১৯৪৮)- তাঁর আঁকা বিখ্যাত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: স্মৃতি, মানসকমল, পরিণাম, অনন্তের সুর, সাকী, কমল না কন্টক প্রভৃতি ।
অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে অসিতকুমার হালদার, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, জয়নুল আবেদিন এবং চিত্রপ্রসাদের নাম করা যায়। চিত্তপ্রসাদের ছবিতে ভারতছাড়ো আন্দোলন, পঞ্চাশের মন্বন্তর, নৌ বিদ্রোহ, তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহের সময় চিত্ররূপ লাভ করেছে।
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
- শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু
- চিত্রকর ও ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজ
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকলা
- বাঙালির পট শিল্পের বিবরণ
- যামিনী রায়ের অবদান
- বাংলার শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
- রবি ঠাকুরের চিত্রকলা চর্চা
বাঙালির চিত্রকলা অধ্যায়টি ভালোভাবে পড়া হয়ে গেলে অথবা উপরের ভিডিওটি মনোযোগ সহকারে দেখলে এই লিংক থেকে MCQ Mock Test দিতে পারো। এই মক টেস্টটি বিগত বছরগুলিতে যে ধরণের প্রশ্ন এসেছে তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দিয়ে সাজানো হয়েছে। তাহলে নিজেই নিজের পড়া যাচাই করে নাও।