দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
নানা রঙের দিন
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- “অভিনেতা মানে একটা চাকর- একটা জোকার, একটা ক্লাউন৷ লোকেরা সারাদিন খেটেখুটে এলে তাদের আনন্দ দেওয়াই হল নাটক-ওয়ালাদের একমাত্র কর্তব্য।”- বক্তার কথার তাৎপর্য আলোচনা করো ৷ ৫ (২০১৬)
উত্তর- অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রধান চরিত্র পেশাদারী থিয়েটারের প্রাক্তন অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। থিয়েটারের সাধারণ দর্শক অর্থাৎ টিকিটকেনা খদ্দেরদের প্রতি তাঁর মনোভাব বিরূপ। রজনীবাবুর মতে, এই সমস্ত দর্শকদের চোখে “অভিনেতা মানে একটা চাকর- একটা জোকার, একটা ক্লাউন”। রজনীবাবুর এই মনোভাব আলোচ্য নাটকের প্রেক্ষিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
যখন তাঁর বয়স কম ছিল, একটি মেয়ে এসেছিল তাঁর জীবনে। তাঁর অভিনয় দেখে মেয়েটি নিজে থেকেই এসে আলাপ করেছিল। আলাপ থেকেই ঘনিষ্ঠতা এবং তারপর প্রেম। মেয়েটির সপর্কে রজনীবাবু যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন। তিনি নিজের মতো করে অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছিলেন তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে।
তারপর একদিন যখন বিয়ের প্রসঙ্গ এল, মেয়েটি তাঁর সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। মেয়েটি রজনীবাবুকে বিয়ে করতে রাজী ছিল কিন্তু তাঁর শর্ত ছিল- “তার আগে তুমি ওই থিয়েটার করা ছেড়ে দাও”। থিয়েটারের লোকের সঙ্গে মেয়েটি প্রেম করতে পেরেছিল কিন্তু তাঁকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। এই করুণ জীবন-অভিজ্ঞতা রজনীবাবুর জীবন-দর্শন পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল।
এই কারণেই থিয়েটারের টিকিটকেনা খদ্দের বা দর্শক সপর্কে অভিনেতা রজনীবাবুর এইরূপ মনোভাব। তারা থিয়েটারের লোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করে, চা-টা খাওয়ায়, কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনোরকম সামাজিক সম্পর্ক স্বীকার করেনা। থিয়েটারের অভিনেতার সঙ্গে কেউ নিজের বোন বা মেয়ের বিয়েও দেবেনা বলে রজনীবাবু মনে করেন।
তিনি নিজের জীবন-অভিজ্ঞতা দিয়ে এই শিক্ষা পেয়েছেন যে, যতক্ষণ অভিনেতারা স্টেজে থাকেন ততক্ষণ কদর। তারপর যে যার ঘরে ফিরে যায়, তাদের কথা কেউ মনেও রাখে না।