বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব
ভাষাবিজ্ঞান (দ্বাদশ শ্রেণি)
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- বাংলা অবিভাজ্য ধ্বনি সম্পর্কে আলোচনা কর। (৫)
উত্তর- মানুষ কথা বলার সময় ধ্বনির পর ধ্বনি জুড়ে বাক্য তৈরি করে। এই ধ্বনিসত্তার স্বরূপ বিচার করে ধ্বনিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়- ১) বিভাজ্য ধ্বনি আর ২) অবিভাজ্য ধ্বনি। বিভাজ্য ধ্বনি বলা সেই সব ধ্বনিগত উপাদানগুলিকে যেগুলি পৃথক পৃথক এককে ভাগ করা সম্ভব। আর যেসব ধ্বনিগত উপাদানকে কোনোভাবেই খণ্ড খণ্ড করে প্রকাশ করা যায় না সেগুলিকে অবিভাজ্য ধ্বনি বলে। যেমন- ‘রাম আসবে?’ এই বাক্যটির বিভাজ্য ধ্বনিগুলি হল- র্+ আ+ ম্+ আ+ স্+ ব্+ এ। আর এই বাক্যে অবিভাজ্য ধ্বনি যেগুলি মিশে রয়েছে সেগুলি একমাত্র মুখের কথায় পাওয়া সম্ভব। বাংলা ভাষার কয়েকটি অবিভাজ্য ধ্বনি হল-
১। শ্বাসাঘাত– উচ্চারনের সময় কোনো একটি বিশেষ ধ্বনি বা অক্ষরের উপর জোর দেওয়াকে বলে শ্বাসাঘাত। সাধারণত বহুদল শব্দের প্রথম দলে শ্বাসাঘাত পড়ে। যেমন, ‘বিদ্যাসাগর’ শব্দের ‘বিদ্’ দলটিতে শ্বাসাঘাত পড়েছে।
২। দৈর্ঘ্য– কোনো দল উচ্চারণের সময় স্বরধ্বনির দীর্ঘতাকেই বলে দৈর্ঘ্য। গবেষণায় প্রমানিত যে, একদল শব্দের দৈর্ঘ্য তুলনামুলকভাবে বেশি। ‘জাম’ আর ‘জামা’ শব্দদুটির মধ্যে ‘জাম’ শব্দে ‘আ’ স্বরধ্বনিটির দৈর্ঘ্য বেশি।
৩। যতি– দল বা শব্দের সীমায় অপেক্ষাকৃত লম্বা ছেদকে যতি বলে। যতি বাক্যের অর্থ পরিস্ফুটনে সহায়তা করে।
৪। সুরতরঙ্গ– বাক্যে সুরের ওঠানামাকে সুরতরঙ্গ বলে। এই সুরতরঙ্গের ফলেই বক্তার মনের বিশেষ ভাব অর্থাৎ বাক্যটি উক্তি, জিজ্ঞাসা নাকি বিস্ময় ইত্যাদি প্রকাশ পায়। যেমন, ‘রাম আসবে?’ এই প্রশ্নবোধক বাক্যে সুর ক্রমশ উর্ধমুখী হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, অবিভাজ্য ধ্বনিগুলি মুখের ভাষার অপরিহার্য অংশ। তবে এগুলির উপস্থিতিতে অর্থের পরিবর্তন হয় না বলে এগুলি বাংলাভাষায় ধ্বনিমূলের ভুমিকা পালন করে না।