কে বাঁচায় কে বাঁচে
দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’| WBCHSE class 12 (HS) Bengali [A] short story Ke Banchay Ke Banche by Manik Bandyopadhyay.
প্রশ্ন- “এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কী?”- কে, কোন অপরাধের প্রায়শ্চিত্তের কথা বলেছেন? বক্তা নিজেকে অপরাধী মনে করেছেন কেন? [১+২+২]
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয় তার নিজের অপরাধের কথা বলেছে।
মৃত্যুঞ্জয় এক বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজেকে অপরাধী বলে মনে করেছে। অবশ্য অন্য কেউ তাকে অপরাধী আখ্যা দেয়নি, এটি তার আত্মসমালোচনা। তার অপরাধটা এইরকম-
“কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্পটি পঞ্চাশের মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই বাংলার বুকে এক ভয়াবহ দুর্যোগের ছায়া দেখা দিয়েছিল। সেই দুর্যোগের নাম পঞ্চাশের মন্বন্তর। কালোবাজারির বাড়বাড়ন্তের ফলে এবং তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের উদাসীনতায় এই দুর্ভিক্ষ চরম আকার ধারণ করেছিল। সেই সময় গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ সামান্য খাবারের আশায় শহরে এসে হাজির হয়েছিল। সেখানে ক্ষুধার্ত মানুষের তুলনায় লঙ্গরখানার সংখ্যা নেহাতই কম ছিল। আবার, পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের অভাবে ত্রাণকার্যও ব্যাহত হচ্ছিল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, শহরের আনাচে-কানাচে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। সেদিন খাবারের অভাবে শহরের বুকে মৃত্যুমিছিল নেমে এসেছিল। মৃত্যুঞ্জয়ের মতে, এইরূপ সংকটময় পরিস্থিতিতে নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করাই হলো অপরাধ।
মৃত্যুঞ্জয় একজন আদর্শবান মানুষ। দুর্ভিক্ষের কথা সে জানতো, দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষজনের দুর্দশার কথাও সে জানতো। কিন্তু সব জেনেশুনেও এতকাল সে চারবেলা ভরপেট খেয়েছে এবং লোকের অভাবে যথেষ্ট রিলিফ ওয়ার্ক হচ্ছে না জেনেও নিজে অলসভাবে দিন যাপন করেছে। এইজন্য ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর একটি ঘটনা দেখার পর সে নিজেকে অপরাধী বলে মনে করেছিল। (শব্দসংখ্যা- ১৮৯)