মহাশ্বেতা দেবীর গল্প “ভাত”
বড় প্রশ্ন (মান- ৫)
২) ভাত গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।
উত্তর- মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পটি মানবিক আবেদনে সমৃদ্ধ একটি অন্যতম বাংলা ছোটগল্প। গল্পটির নামকরণে লেখিকা বিষয়বস্তুকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। গল্পটির কাহিনিবৃত্তে রয়েছে উচ্ছব নাইয়া নামের একজন কৃষিমজুরের কাহিনি যে ভাতের অভাবে মানুষ থেকে প্রেত হয়ে গিয়েছিল আর পেটে ভাত পড়তেই আবার মানুষ হয়ে উঠেছিল।
ভাত হল অন্ন আর অন্নই লক্ষ্মী। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রথম তিনটি শর্ত হল অন্ন, বস্ত্র আর বাসস্থান। উচ্ছব সতীশ মিস্ত্রীর জমিতে কাজ করে নিজের আর পরিবারের অন্নসংস্থান করত। কিন্তু একবার ধানে পোকা লাগল, শুরু হল উচ্ছবের সর্বনাশ। আধপেটা, সিকিপেটা খেয়ে সে কোনোরকমে বেঁচে ছিল। কিন্তু মাতলা নদীর বন্যায় তার সব কেড়ে নিল। একরাতেই সে স্ত্রী-সন্তান সকলকে হারাল। অথচ পেটের জ্বালা এমনই যে তার কাছে মনের দুঃখ ম্লান হয়ে যায়। এত দুঃখেও সে কাঁদল না। মানুষ উচ্ছব প্রেত হয়ে গিয়েছিল। পেটে ভাত পড়তেই সে আবার মানুষ হতে পারত।
ফফভাত খাবার আশায় সে কলকাতা গেল। গ্রামসম্পর্কিত বোন বাসিনীর মনিবের বাড়িতে গিয়ে উঠল ভাতের আশায়। আড়াই মণ কাঠ কাটার বিনিময়ে তার উদরপুর্তির ব্যাবস্থা হয়েছিল। শরীরে বল ছিল না কেবল ভাতের আশায় সে কাঠগুলো কাটল। ভাতের গন্ধে উতলা হয়ে স্ত্রী আর ছেলেমেয়েদের কথা মনে করে চোখে জল এল তার। সবশেষে, সমস্ত লোকাচার তুচ্ছ করে অশৌচ বাড়ির ভাত খেয়ে সে প্রেত থেকে মানুষ হয়ে উঠল।
এইভাবে লেখিকা সমগ্র গল্প জুড়ে একজন মানুষের অন্নচিন্তা, অন্নাভাব আর অন্নসংস্থানের কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। তাই গল্পের নাম ‘ভাত’ সবদিক থেকেই সার্থক হয়েছে।