কাদম্বিনী বসু (গঙ্গোপাধ্যায়)

দ্বাদশ শ্রেণি

বাঙালির বিজ্ঞান চর্চা

বড় প্রশ্ন (মান-৫)

প্রশ্ন- বাংলা চিকিৎসাবিজ্ঞানে কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা৷ (৫)

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাঙালির অবদান

উত্তর- উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধেই ভারতে স্ত্রী শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল। কিন্তু তখনো পর্যন্ত মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার খুলে যায়নি। ১৮৭৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন কর্তৃপক্ষ (সিনেট) মেয়েদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাভের দাবি মেনে নেয়। এরপরেই ১৮৮২ সালে কাদম্বিনী বসু এবং চন্দ্রমুখী বসু প্রথম মহিলা স্নাতক হন। চন্দ্রমুখী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং কাদম্বিনী বসু কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রথম মহিলা ছাত্রী হিসেবে ডাক্তারি পড়া শুরু করেন (১৮৮৪)।

ডিগ্রী লাভ করার পর কাদম্বিনী লেডি ডাফরিন হাসপাতালের চিকিৎসকরূপে নিযুক্ত হন। ১৯৯২ সালে স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রেরণায় তিনি ডাক্তারি পড়ার জন্য বিলেত যাত্রা করেন। LRCP (এডিনবরা), LRCS (গ্লাসগো), এবং GFPS (ডাবলিন) ডিগ্রি নিয়ে তিনি দেশে ফেরেন এবং চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

কৃতিত্ব

(১) কাদম্বিনী বসু (গঙ্গোপাধ্যায়) বাংলা তথা ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার এবং একইসঙ্গে বিলেতি ডিগ্রিধারী প্রথম মহিলা চিকিৎসক। প্রায় সমসাময়িক আর একজন ভারতীয় নারী যিনি বিদেশ থেকে ডাক্তারী পাশ করে দেশে ফিরেছিলেন, যার নাম আনন্দী গোপাল জোশী, তিনি মাত্র ২২ বছর বয়সে মারা যান। অর্থাৎ, চিকিৎসক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করতেই পারেননি। তাই কাদম্বিনী বসুই ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক।

(২) যে সময় বাড়ির মেয়েদের বাইরে পা রাখার আগে দশবার ভাবতে হতো, সেই সময় একজন মেয়ের পক্ষে ডাক্তারি পাশ করাটাই বোধহয় সবথেকে বড় কৃতিত্ব। তৎকালীন সমাজ কাদম্বিনীকে প্রতি পদে বাধা দিয়েছিল, এমনকি রুক্ষনশীল শিক্ষকসমাজ ডাক্তারি পাস করার পরেও তাঁকে ডাক্তারির ডিগ্রি না দিয়ে ‘গ্র্যাজুয়েট অফ দি মেডিকেল কলেজ অফ বেঙ্গল’ সার্টিফিকেট দিয়েছিল। এরপরেও তিনি ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন, এটাও কম কৃতিত্বের নয়।

(৩) তিনি সমকালে একজন সফল চিকিৎসক হিসেবে বহু জটিল রোগির চিকিৎসা করেছিলেন এবং বহু অস্ত্রোপচারও করেছিলেন।

(৪) তাঁর ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত সমকালীন মেয়েদের প্রেরণা জুগিয়েছিল।

(৫) চিকিৎসা ছাড়াও তিনি অনেক সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

(৬) ১৮৯৫ সালে নেপালের রাজমাতার চিকিৎসার্থে তিনি নেপালে যান এবং সেখানে আধুনিক জনচিকিৎসার সূচনা করেন।

error: Content is protected !!