নানা রঙের দিন নামকরণ।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা

নানা রঙের দিন 

বড় প্রশ্ন (মান-৫) 

প্রশ্ন- ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটির নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো ৷ ১+৪ (২০১৫)

উত্তর- অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি জনপ্রিয় একাঙ্ক নাটক হল ‘নানা রঙের দিন’। নাটকটি আন্তন চেকভের ‘সোয়ান সং’ নাটকের অনুবাদ হলেও নাট্যকারের স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। নাট্যকার এই নাটকের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রধান বিষয়কেই অবলম্বন করেছেন।

আলোচ্য নাটকের প্রধান চরিত্র বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। নাটকের অপর চরিত্র কালীনাথের সঙ্গে কথোপকথন প্রসঙ্গেই উঠে আসে রজনীবাবুর ফেলে আসা জীবনের নানা কথা। নানা বর্ণে চিত্রিত তার জীবনের ইতিকথাই এই নাটকের প্রধান বিষয়।

রাঢ়বঙ্গের এক বনেদি ব্রাহ্মণ বংশের সন্তান রজনীবাবু প্রথম জীবনে পুলিশ ছিলেন। অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তাকে থিয়েটার জগতে নিয়ে এসেছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নাট্যজগতে প্ৰতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। যুবা অভিনেতা রজনীকান্তের এই সব দিনগুলি ছিল রঙিন দীপ্তিতে উজ্জ্বল।

তার অভিনয় দেখেই একটি মেয়ে তার প্রেমে পড়েছিল, যদিও সেই প্রেম বিয়ে পর্যন্ত এগোয়নি। রজনীবাবুর স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে সেইসব বিবর্ণ দিনের কথাগুলি।

তার অভিনয় দেখেই একটি মেয়ে তার প্রেমে পড়েছিল কিন্তু সে সম্পর্ক বিয়ের পরিণতি পায়নি। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত রজনী চাটুজ্জ্যের এইসব দিনগুলি ছিল হতাশার ধূসর রঙে মলিন।

বয়স বাড়তে থাকে, শরীরের তেজ কমতে শুরু করে। রজনীবাবু মূল চরিত্র ছেড়ে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। সাদা চুলে কলপ করে নিজেকে রঙিন রেখে তিনি বয়সটাকে পাত্তা দিতে চান না, কিন্তু বয়স তো থেমে থাকবার নয়। একসময় বার্ধক্য গ্রাস করে তাকে। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে একাকীত্ব এবং হতাশা

জীবনের পঁয়তাল্লিশটা বছর অভিনয় জগতে থেকে একসময় তিনি বুঝতে পারলেন যে, তার দিন শেষ হয়ে এসেছে। এখন তার চোখের সামনে চিতার আগুনের রক্তিম ঝলসানি।

এইভাবে, আলোচ্য নাটকে অভিনেতা রজনীবাবুর জীবনের নানা রঙের দিনগুলিই নাট্যরূপে উপস্থাপিত হয়েছে। তাই এই নামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক হয়েছে।

error: Content is protected !!